December 31, 2025, 7:39 pm

দৈনিক কুষ্টিয়া অনলাইন/
শীতকালীন সবজিতে বাজার ভরপুর থাকলেও কুষ্টিয়ায় দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। উল্টো ভরা মৌসুমেও সবজির চড়া দামে ক্রেতারা পড়েছেন চরম বিপাকে। অন্যদিকে দিন দিন বাড়ছে মাছের দাম।
শনিবার কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজার, পৌর বাজার, সাদ্দাম বাজার, মজমপুর ও কুমারখালী বাজার থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, লাউ, গাজরসহ শীতকালীন সবজির পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলেও দাম কমছে না। ক্রেতারা বলছেন, প্রতিবছর শীত এলেই সবজির দাম অনেকটা কমে যায়। কিন্তু এবার তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে।
বাজারে মাঝারি আকারের ফুলকপি ও বাঁধাকপি প্রতিটি ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন, গাজর, শসা, কাঁচা মরিচ ও নতুন আলু প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ঝিঙা ও শিম ৬০ থেকে ৭০ টাকা, বরবটি ও করলা ৯০ থেকে ১০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। অধিকাংশ সবজির দাম এখনো কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকার ঘরে রয়ে গেছে।
সবজি বিক্রেতারা জানান, কৃষকের কাছ থেকে সবজি তুলনামূলক বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। ফলে খুচরা বাজারেও দাম কমানো সম্ভব হচ্ছে না। অনেক বিক্রেতা অভিযোগ করেন, পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় পাইকারি বাজার থেকেই পণ্য আনতে অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে। পথে পথে চাঁদা আদায়ের কারণেও পরিবহন খরচ বাড়ছে বলে অভিযোগ তাদের।
অন্যদিকে কুষ্টিয়ার খাল, বিল ও নদীতে পানি কমে যাওয়ায় মাছ ধরা পড়লেও বাজারে এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। মাছের দাম আগের মতোই চড়া। বাজারে মাঝারি আকারের রুই মাছ প্রতি কেজি ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, চাষের শিং ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ থেকে ২৫০ টাকা এবং বড় চিংড়ি ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য নিয়মিত মাছ কেনা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।
তবে মুরগির বাজারে তুলনামূলক স্বস্তি রয়েছে। মুরগী বিক্রেতা রশিদ আসকারী কুষ্টিয়ার বাজারগুলোতে বয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা এবং দেশি মুরগি ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পৌর বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা আলমগীর হোসেন ভুইয়া বলেন, “শীত এলেই সবজি সস্তা হওয়ার কথা। কিন্তু এবার দাম এত বেশি যে আগে যেভাবে এক কেজি করে কিনতাম, এখন অর্ধেক কিনতেও ভাবতে হচ্ছে।” আরেক ক্রেতা বলেন, “মাছের দাম সব সময়ই বেশি থাকে। এত দামে মাছ কিনে খাওয়া সাধারণ মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য।”
বিক্রেতারা সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা ও পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিকে দায়ী করলেও ভোক্তারা মনে করছেন, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যই এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, মৌসুমি সবজির ভরা সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও যদি সমন্বিত বাজার ব্যবস্থাপনা ও নির্বিঘ্ন পরিবহন নিশ্চিত না করা যায়, তাহলে কুষ্টিয়ার বাজারেও ভোক্তাদের এই চাপ আরও দীর্ঘস্থায়ী হবে।